ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক
Contents
ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক

যেসব উপাদান ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি নীচে আলােচনা করা হল :
মৌসুমি বায়ু
ভারতের জলবায়ুকে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করে মৌসুমি বায়ু । দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় — গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু :
গ্রীষ্মকালে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ওপর যে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় , তার আকর্ষণেই দক্ষিণদিকের সাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের দিকে ছুটে আসে । এই বায়ুর প্রভাবেই ভারতে বর্ষাকালের আবির্ভাব ঘটে এবং সমগ্র দেশেই বৃষ্টিপাত হয় । ভারতে বার্ষিক মােট বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ঘটে থাকে ।
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু :
শীতকালে মধ্য এশিয়ার ওপর সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ এবং ওই উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও শুষ্ক বাতাস উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুরূপে ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয় । এর ফলে এসময় সমগ্র দেশের তাপমাত্রাই যথেষ্ট হ্রাস পায় । উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক বলে এসময় ভারতে বৃষ্টিপাতও বিশেষ হয় না । তবে ওই বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে আসার সময় কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে । ফলে ওই বায়ু যখন তামিলনাড়ু উপকূলে পৌছােয় তখন সেখানে কিছু বৃষ্টিপাত হয় ।
উল্লিখিত দুই মৌসুমি বায়ুর আগমন-প্রত্যাগমন অনুসারেই ভারতের জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়—
( ক ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল ,
( খ ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল ,
( গ ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল বা শরৎকাল ,
( ঘ ) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা শীতকাল ।
অক্ষাংশের পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান
কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে । তাই অক্ষাংশ অনুসারে ভারতের দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় অঞ্চল এবং উত্তরাংশ উপক্ৰান্তীয় ও নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলের অন্তর্গত । অর্থাৎ দক্ষিণাংশের তুলনায় উত্তরাংশে উষ্ণতা কম ।
হিমালয় ও পশ্চিমঘাট-পূর্বঘাট পর্বত শ্রেণীর অবস্থান
উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতাে দাঁড়িয়ে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দেয় বলে ভারতের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত হয় । শীতকালে মধ্য এশিয়ার কনকনে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহকে এই হিমালয় পর্বতমালা প্রতিহত করে । উপদ্বীপ অঞ্চলের দু-দিকে অবস্থিত পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা আর্দ্র মৌসুমি বায়ুকে বাধা দিয়ে উপকূল অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় ।
ভূমির উচ্চতা
উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমে যায় । সুউচ্চ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এজন্য চিরকাল তুষারাবৃত থাকে । ফলে দিল্লির তুলনায় সিমলার উষ্ণতা কম ।
সমুদ্র থেকে দূরত্ব
ভারতের উপদ্বীপ অঞ্চলের পূর্ব , পশ্চিম ও দক্ষিণ — এই তিন দিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু অনেক সমভাবাপন্ন । সমুদ্র থেকে অনেক দূরে বলে উত্তর ভারতের অভ্যন্তর ভাগে শীত এবং গ্রীষ্মের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি ।
রাজস্থানের মরু অঞ্চল
গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে ভীষণ উষ্ণতার জন্য বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । ওই নিম্নচাপ ভারত মহাসাগর থেকে মৌসুমি বায়ুকে আকর্ষণ করে আনে । সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসা ওই আর্দ্র মৌসুমি বায়ুর জন্য সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টিপাত হয় ।