ভারতের নদ নদীর বৈশিষ্ট্য
Contents
ভারতের নদ নদীর বৈশিষ্ট্য

ভারতের ওপর দিয়ে ছােটো-বড়াে অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়েছে , যেমন — গঙ্গা , ব্রহ্মপুত্র , সিন্ধু , মহানদী , গােদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী , পেনার , ভাইগাই , তাম্রপর্ণী , নর্মদা , তাপ্তি , সুবর্ণরেখা , লুনি , সবরমতী প্রভৃতি । এইসব নদনদীর কতকগুলি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় , যেমন —
চার প্রকার প্রবাহ অঞ্চল
প্রবাহের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতের নদ নদীকে চারটি প্রবাহ অঞ্চলে ভাগ করা যায় ।
উত্তর ভারতের নদনদী :
গঙ্গা , সিন্ধু , ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি কিন্তু পর্বতের উত্তরভাগে অবস্থিত উত্তর ভারতের সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । এগুলিকে বলে উত্তর ভারতের নদনদী ।
মরু অঞ্চলের নদনদী :
রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বর্ষাকালে বহু অস্থায়ী নদী সৃষ্টি হয় । এগুলির অধিকাংশই স্বল্পদৈর্ঘ্যের , ক্ষীণকায়া এবং মরুভূমির বিভিন্ন হ্রদে পড়ে বা বালিতে হারিয়ে যায় । এগুলির মধ্যে একটি নদী আছে যথেষ্ট বড়াে এবং স্থায়ী । এর নাম লুনি । এটি পড়েছে ‘ কচ্ছের বড়াে রাণ ’ -এ । তাই লুনিকে বলে অন্তর্বাহিনী নদী ।
দক্ষিণ ভারতের নদনদী :
দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চলে অনেকগুলি নদী আছে , যেমন— মহানদী , গােদাবরী , কৃষ্ণা , কাবেরী , নর্মদা , তাপী প্রভৃতি ।
উপকূলের সমভূমির নদ নদী :
ভারতের সংকীর্ণ উপকূলভাগে স্বল্প দৈর্ঘ্যের অনেক নদনদী আছে । এগুলির মধ্যে পূর্ব উপকূলে ভাইগাই , তাম্রপর্ণী , পালার ও রুষিকুল্য এবং পশ্চিম উপকূলে সরাবতী , ভারতপুঝা , পেরিয়ার , উল্লাস ও নেত্রবতী উল্লেখযােগ্য ।
আন্তর্জাতিক গুরুত্বের নদী
উত্তর ভারতের সিন্ধু , গঙ্গা , ব্ৰহ্মপুত্র , শতদ্রু , কোশী , গণ্ডক প্রভৃতি নদী প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এইসব নদী আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পেয়েছে ।
বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের নদী
দৈর্ঘ্যে বড়াে , মাঝারি এবং ছােটো এই তিন ধরনের নদীই ভারতে আছে । এগুলির মধ্যে উত্তর ভারতের নদীগুলি দৈর্ঘ্যে খুবই বড়াে , যেমন — সিন্ধু ( ২,৮৮০ কিমি ) , ব্রহ্মপুত্র ( ২,৫২০ কিমি ) এবং গঙ্গা ( ২,৫১০ কিমি ) । অবশ্য সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের সামান্য অংশই ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । এজন্য গঙ্গাই ভারতের দীর্ঘতম তথা প্রধান নদী ।
দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদীই মাঝারি দৈর্ঘ্যের , যেমন — গােদাবরী ( ১,৪৬৫ কিমি ) , কৃষ্ণা ( ১,৪০০ কিমি ) , নর্মদা ( ১,৩০০ কিমি ) , মহানদী ( ৮৮০ কিমি ) , কাবেরী ( ৮০০ কিমি ) , তাপী ( ৭২৪ কিমি ) প্রভৃতি ।
স্বল্প দৈর্ঘ্যের নদী বেশি দেখা যায় উপকূল অঞ্চলে । এই ধরনের কয়েকটি নদী হল পূর্ব উপকূলে তাম্রপর্ণী ( ১৩০ কিমি ) , রুষিকুল্য ( ১৪৬ কিমি ) , পশ্চিম উপকূলে সরাবতী ( ১২২ কিমি ) , উল্লাস ( ১২২ কিমি ) প্রভৃতি ।
নদ নদীর তিন প্রকার অববাহিকা
অববাহিকার আয়তন অনুসারে ভারতের নদ নদীকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় ।
প্রধান নদনদী :
গঙ্গা , সিন্ধু , ব্রহ্মপুত্র , নর্মদা , তাপী , মহানদী , গােদাবরী , সবরমতী , কৃষ্ণা , মাহী , ব্রাহ্মণী , সুবর্ণরেখা , পেনার ও কাবেরী — এই ১৪ টি নদীর অববাহিকার আয়তন ২০,০০০ বর্গ কিলােমিটারেরও বেশি । অববাহিকার আয়তন খুব বড়াে বলে এগুলিকে প্রধান নদনদী বলা হয় ।
মাঝারি নদনদী :
ভারতে প্রায় ৪৫ টি নদী আছে যেগুলির অববাহিকার আয়তন ২,০০০ থেকে ২০,০০০ বর্গ কিলােমিটার । অববাহিকার আয়তন মাঝারি বলে এগুলিকে মাঝারি নদনদী বলা যায় । দক্ষিণ ভারতের সরাবতী , পেরিয়ার , পালার , বৈতরণী প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী ।
ছােটো নদনদী :
ভারতের প্রায় ৫৫ টি নদীর অববাহিকার আয়তন ২,০০০ বর্গ কিলােমিটারের কম । অববাহিকার আয়তন কম বলে এদের ছােটো নদনদী বলা যায় । লুনি , বানস , দামন গঙ্গা প্রভৃতি এই ধরনের নদনদী ।
নদনদীর দুটি প্রধান উৎস অঞ্চল
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি থেকেই ভারতের অধিকাংশ নদনদীর উৎপত্তি হয়েছে । এদের মধ্যে উত্তর ভারতের বেশির ভাগ নদী হিমালয় থেকে এবং দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।
স্বল্প সংখ্যক নদী নিত্যবহ
হিমালয়ের তুষারাবৃত অঞ্চল থেকে নির্গত হওয়ায় উত্তর ভারতের গঙ্গা , সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের কয়েকটি উপনদী বৃষ্টিপাত ছাড়াও তুষারগলা জল পায় । তাই এগুলি নিত্যবহ নদী । কিন্তু দক্ষিণ ভারত-সহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যেসব নদী আছে সেগুলি কেবলমাত্র বৃষ্টির জলেই পুষ্ট । বৃষ্টিহীন শুষ্ক ঋতুতে এইসব নদীর জল খুব কমে যায় এবং অনেক সময় একেবারেই শুকিয়ে যায় ।
অধিকাংশ নদী পূর্ব বাহিনী
উত্তর ভারতের সমভূমি এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমি সাধারণভাবে পূর্বে ঢালু বলে উত্তর ভারতের প্রধান নদী গঙ্গাসহ দাক্ষিণাত্যের অধিকাংশ নদী পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । তবে চ্যুতির ফলে সৃষ্ট অবনমিত ভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দাক্ষিণাত্যের নর্মদা ও তাপী নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে ।
বঙ্গোপসাগরে পতিত নদ নদীর মোহনায় বদ্বীপ
বঙ্গোপসাগরে পতিত গঙ্গা , মহানদী , গােদাবরী , কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর মােহনায় সৃষ্টি হয়েছে বড়াে বড়াে বদ্বীপ । কিন্তু আরব সাগরে পতিত নর্মদা , তাপ্তি প্রভৃতি নদীর মােহনায় বদ্বীপ নেই ।