ভূগোল

উত্তর ভারতের নদনদী

Contents

উত্তর ভারতের নদনদী

images 10
উত্তর ভারতের নদনদী

উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে গঙ্গা নদী , সিন্ধু নদ ব্ৰহ্মপুত্র নদ এবং এদের উপনদী ও শাখানদী গুলিই প্রধান । এছাড়া উত্তর ভারতের আর একটি উল্লেখযােগ্য নদী হল লুনি ।  

গঙ্গা নদী

ভারতের প্রধান নদী গঙ্গা । এর মােট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫১০ কিমি । এর মধ্যে ভারতে আছে প্রায় ২০৭১ কিমি ।

( i ) উত্তরাঞ্চলে কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গােমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি । তবে উৎসের কাছে এর নাম ভাগীরথী । দেবপ্রয়াগের কাছে এসে ভাগীরথী তার অন্যতম প্রধান উপনদী অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে । 

( ii ) ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ এর পর গঙ্গা নামে শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের মধ্য দিয়ে আরও দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে হরিদ্বারের কাছে পার্বত্য অবস্থা অতিক্রম করে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে । 

( iii ) এর পর গঙ্গা নদী প্রথমে দক্ষিণমুখী এবং পরে পূর্বমুখী হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে । 

( iv ) সেখান থেকে কিছুটা পথ দক্ষিণ-পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ার পর গঙ্গা মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে এসে পদ্মা ও ভাগীরথী — এই দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে । 

( v ) প্রধান শাখাটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে । 

( vi ) ক্ষীণস্রোতা দ্বিতীয় শাখাটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । 

( vii ) মােহানার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে ।

( viii ) গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডান দিক থেকে যমুনা ও শােন এবং বাম দিক থেকে গােমতী , ঘর্ঘরা , রামগঙ্গা , গণ্ডক , কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে ! গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান । যমুনােত্ৰী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গা , নদীতে পড়েছে । চম্বল , বেতােয়া , কেন , শারদা প্রভৃতি যমুনার ডান তীরের উল্লেখযােগ্য উপনদী । 

সিন্ধু নদ

উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিন্ধু । তিব্বতের সিন-খা-বাব হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । এর পর নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে পড়েছে । সিন্ধুর মােট দৈর্ঘ্য ২৮৮০ কিমি । এর মধ্যে মাত্র ৭০৯ কিমি ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । সিন্ধুর উপনদী সমূহের মধ্যে পাঁচটি প্রধান । এগুলি হল — শতদ্রু , বিপাশা , ইরাবতী , চন্দ্রভাগাবিতস্তা বা ঝিলাম । 

ব্রহ্মপুত্র নদ

উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র । এর মােট দৈর্ঘ্য ২৫৮০ কিমি । ( i ) তিব্বতের রাক্ষসতাল-মানস সরােবরের প্রায় ৯০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি । 

( ii ) সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্র প্রথমে সাংপাে নামে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্বদিক বরাবর প্রায় ১,৫০০ কিমির বেশি প্রবাহিত হয়েছে । 

( iii ) তারপর নামচা বারওয়া শৃঙ্গের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে । ডিহং অসমে প্রবেশ করেছে সদিয়ার কাছে । এই সদিয়ার কাছেই ডিবং ও লােহিত নদী এসে ডিহং -এর সঙ্গে মিলিত হয়েছে । 

( iv ) এর পর ডিহং , ডিবং এবং লােহিত — এই তিনটি নদীর মিলিত জল ব্রহ্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবড়ি পর্যন্ত বয়ে গেছে । 

( v ) ধুবড়ি থেকে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণমুখী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তারপর গােয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । 

( vi ) অসম উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ভূমির ঢাল খুব কম বলে এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতি খুব মন্থর । এজন্য ব্রহ্মপুত্র বিনুনির মতাে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে । এগুলির মধ্যে ৯২৯ বর্গ কিমি আয়তন যুক্ত মাজুলি দ্বীপটি পৃথিবীর বৃহত্তম নদী-দ্বীপ । 

( vii ) ব্রহ্মপুত্রের অনেকগুলি উপনদী আছে । এগুলির মধ্যে সুবনশিরি , ভরলি , মানস , সংকোশ প্রভৃতি ডান তীরের উল্লেখযোগ্য উপনদী । আর বাম তীরের উপনদী সমূহের মধ্যে ধানসিরি , কপিলিলােহিত প্রধান । 

লুনি নদী

উত্তর ভারতের আর একটি উল্লেখযােগ্য নদী লুনি । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৫০ কিমি । লুনি রাজস্থান মরু অঞ্চলের নদী আজমীরের পাশে আনাইসাগর হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে লুনি কচ্ছের রাণ অঞ্চলে পড়েছে । এই নদীটির জল লােনা বলে এর নাম লুনি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!