ভূগোল

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান কাকে বলে

Contents

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান কাকে বলে 

index 27
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান কাকে বলে

যেসব উপাদানের গড় অবস্থা বিচার করে আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ধারণ করা হয় , সেগুলিকেই বলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান । উপাদানগুলি হল— ( ১ ) বায়ুর উষ্ণতা , ( ২ ) বায়ুর চাপ , ( ৩ ) বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতি , ( ৪ ) বায়ুর আর্দ্রতা , ( ৫ ) আকাশের অবস্থা বা মেঘ , ( ৬ ) বৃষ্টিপাত , ( ৭ ) তুষারপাত প্রভৃতি । কোনাে জায়গার আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা করতে হলে এইসব উপাদান পর্যবেক্ষণ করতে হয় ।

বায়ু প্রবাহ কিভাবে সৃষ্টি হয়

ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য প্রধানত বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় । কারণ , বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায় । কোনাে স্থানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় । ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপের সমতা আনার জন্য চারদিকের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে যায় অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় ।

বায়ুপ্রবাহের গতি নির্ণয় করা হয় কীভাবে 

বায়ুপ্রবাহের গতি পরিমাপ করার জন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় তার নাম অ্যানিমোমিটার । এই যন্ত্রে একটি লম্বা দণ্ডের মাথায় চারটি বাটি লাগানাে থাকে । আর দণ্ডের নীচের দিকে ঘড়ির মতাে একটি যন্ত্র থাকে । বায়ুর বেগে দণ্ডটিসহ যখন বাটিগুলি ঘােরে , তখন নীচের ওই যন্ত্রে বায়ুর বেগ সূচিত হয় ।

নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা কাকে বলে 

একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের মােট পরিমাণকে বলে নিরপেক্ষ চরম বা বিশুদ্ধ আর্দ্রতা । কোনাে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং ওই একই উষ্ণতায় ওই একই আয়তনের বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা — এই দুয়ের অনুপাতকেই বলে আপেক্ষিক বা সাপেক্ষ আর্দ্রতা । আপেক্ষিক আদ্রর্তা শতকরা ( % ) হিসেবে প্রকাশ করা হয় । 

সুতরাং আপেক্ষিক আদ্রর্তা = নির্দিষ্ট পরিমাণ উষ্ণতায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ( চরম আদ্রর্তা ) ÷ ওই পরিমাণ উষ্ণতায় বায়ুকে পরিপৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ X ১০০

আপেক্ষিক আর্দ্রতার সঙ্গে উষ্ণতার সম্পর্ক কী 

বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা নির্ভর করে বায়ুর উষ্ণতার ওপর— 

( ১ ) বায়ুর উষ্ণতা বেড়ে গেলে তার জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায় । সুতরাং , সেই অবস্থায় বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায় । 

( ২ ) আবার বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে তার জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতাও কমে যায় । সুতরাং , তখন বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতাও বাড়ে । এজন্য বলা হয় যে , বায়ুর উষ্ণতা এবং এর আপেক্ষিক আর্দ্রতার মধ্যে একটি বিপরীত সম্বন্ধ আছে ।

সব মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় না কেন 

জলীয় বাষ্প হালকা বলে সহজেই ওপরে উঠে যায় । ওপরে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা , কয়লার কণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষার কণায় পরিণত হয় । এই ভাসমান জলকণা বা তুষার কণার সমষ্টির নাম মেঘ । মেঘ সৃষ্টিকারী এইসব জলকণা বা তুষারকণা অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয় , যাদের গড় ব্যাস মাত্র ১/১০০ মিলিমিটার বা ০.০১ মিলিমিটার । তাই এগুলি অতি সহজেই মেঘ হিসেবে ভেসে বেড়ায় । কিন্তু মেঘের মধ্যে ভাসমান এই অতি ক্ষুদ্র কণাগুলি যখন পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গড়ে ০.৫ মিলিমিটার ব্যাসের হয় , তখন এগুলি আর ভেসে থাকতে পারে না । মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে ওই মেঘ বৃষ্টিরূপে নীচে পড়ে । মেঘের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষারকণা বিভিন্ন কারণে সংযুক্ত হয় , যেমন — কখনও বিদ্যুৎ মােক্ষণের জন্য , কখনও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর প্রভাবে খুব বেশি শীতল হয় বলে । যেহেতু সব মেঘে জলকণা বা তুষারকণা সংযুক্তির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় না , তাই সব মেঘ থেকে বৃষ্টিও হয় না ।

বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয় কীভাবে 

বৃষ্টিপাত যে যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা হয় তার নাম বৃষ্টিমাপক যন্ত্র বা রেনগেজ । যন্ত্রটিতে ১৩ সেমি বা ৫ ইঞ্চি  ব্যাস যুক্ত একটি চোঙের মধ্যে একটি ৫ ইঞ্চি বা ১৩ সেমি ব্যাসের কুপি বা ফানেল ( funnel ) এমনভাবে বসানাে থাকে , যাতে কুপির মধ্যে পড়া বৃষ্টির জল একটুও নষ্ট না হয়ে ভেতরের বােতলে গিয়ে জমা হয় । বাইরের জলের ছিটে যাতে ভেতরে না পড়ে , তাই যন্ত্রটি ভূমি থেকে প্রায় ১ ফুট ওপরে রাখা হয় । ২৪ ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পরে বােতলে যে পরিমাণ বৃষ্টির জল জমে , তা একটি নির্দিষ্ট দাগ যুক্ত পরিমাপক চোঙের ( cylinder ) মধ্যে ঢেলে বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা হয় ।

পশ্চিমা বায়ুকে কেন প্রবল পশ্চিমা বায়ু বলা হয় 

একটি উল্লেখযােগ্য নিয়ত বায়ুর নাম পশ্চিমা বায়ু । এই বায়ুটি উভয় গােলার্ধে ৩৫° থেকে ৬০° অক্ষাংশের মধ্যে প্রবাহিত হয় । উত্তর গােলার্ধে ৩৫° থেকে ৬০° অক্ষাংশের মধ্যে জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের গতির ওপর ঘর্ষণজনিত বল বা বাধার প্রভাব খুব বেশি পড়ে । ফলে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ বাধাপ্রাপ্ত হয় । কিন্তু দক্ষিণ গােলার্ধে ৩৫° থেকে ৬০° অক্ষাংশের মধ্যে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধা কম পড়ে । ফলে বিস্তৃত জলরাশির ওপর দিয়ে পশ্চিমা বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হতে পারে । তাই দক্ষিণ গােলার্ধে পশ্চিমা বায়ুকে ‘ প্রবল পশ্চিমা ’ বলা হয় ।

আবহাওয়া কাকে বলে

কোনাে নির্দিষ্ট স্থানের কোনাে নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা , বায়ুর চাপ , বায়ুপ্রবাহ , বায়ুর আদ্রর্তা , আকাশে মেঘের অবস্থা , বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি উপাদানের গড় অবস্থাকে আবহাওয়া বলে । অর্থাৎ আবহাওয়া হল বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা , যা বায়ুমণ্ডলের কতকগুলি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল ।

জলবায়ু কাকে বলে

কোনাে বিশাল অঞ্চলের কমপক্ষে ৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে । সুতরাং , জলবায়ু হল আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য সমূহের দীর্ঘকালীন ( কমপক্ষে ৩৫ বছরের ) গড় অবস্থা ।

জলস্তম্ভ ও বালিস্তম্ভ কাকে বলে 

প্রবল ঘূর্ণবাত যখন সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে যায় , তখন অনেক সময় ওই ঘূর্ণবাত সমুদ্রের জলকে এমনভাবে আকর্ষণ করে যে , জলরাশি স্তম্ভের মতাে অনেক উঁচুতে উঠে পড়ে । একে বলে জলস্তম্ভ । 

একইভাবে , মরুভূমির ওপর দিয়ে ঘূর্ণবাত প্রবাহিত হলে , সেই জায়গার বালুকা রাশিকে আকর্ষণ করে ওপরে তুলে ফেলে । একে বলে বালিস্তম্ভ

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে 

যে-কোনাে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ বা গ্রহণ করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা বা সীমা আছে । এই সীমা নির্ভর করে ওই বায়ুর উষ্ণতার ওপর । উষ্ণতা বাড়লে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ে , উষ্ণতা কমলে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাও কমে । অর্থাৎ , নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে । যখন কোনাে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ওই পরিমাপের শেষ সীমায় পৌঁছােয় তখন একে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে । আর , ক্ষমতার তুলনায় কম জলীয় বাষ্প গ্রহণ করলে ওই বায়ুকে অসম্পৃক্ত বা অপরিপৃক্ত বায়ু বলে ।

শিশিরাঙ্ক উষ্ণতা বলতে কী বােঝ 

সাধারণ অবস্থায় বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তাতে ওই বায়ু সম্পৃক্ত হয় না । কোনাে কারণে ওই বায়ু ধীরে ধীরে শীতল হলে তার জলধারণ ক্ষমতা কমে যায় । কিছু সময় পরে ওই বায়ু বেশি ঠান্ডা হলে তার জলধারণ ক্ষমতা আরও কমে গিয়ে এমন একটি অবস্থায় আসে যে , তা সম্পৃক্ত হয়ে যায় । এই সময় বায়ু তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ত্যাগ করে । তখন ওই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয় । বায়ুতে যে উষ্ণতায় শিশির গঠিত হয় সেই উষ্ণতাকে শিশিরাঙ্ক উষ্ণতা বলে । 

আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব কী

বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার বিশেষ গুরুত্ব আছে । কারণ 一

( ১ ) তুষারপাত , বৃষ্টিপাত , শিশির প্রভৃতির সম্ভাবনা আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে বােঝা যায় । বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং এর ঋতুকালীন স্থায়িত্বের ওপর যে-কোনাে অঞ্চলের জলবায়ু , কৃষিকাজ প্রভৃতি নির্ভর করে । 

( ২ ) ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণের হারও আপেক্ষিক আদ্রর্তা থেকে জানা সম্ভব । 

অধঃক্ষেপন কাকে বলে

জলীয় বাষ্পপূর্ণ উর্ধ্বগামী বায়ু ওপরে উঠে ধীরে ধীরে প্রসারিত ও শীতল হয় এবং এর ফলে ঘনীভূত হয়ে জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে । মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা জলকণাগুলি যখন আয়তনে আরও বেড়ে যায় তখন তা আর ভেসে থাকতে পারে না , মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে পড়ে , একেই বলে অধঃক্ষেপণ । যেমন— ( ১ ) বৃষ্টিপাত , ( ২ ) গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি , ( ৩ ) তুষারপাত , ( ৪ ) শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের উদাহরণ ।

সমবর্ষণ রেখা বলতে কী বোঝো

যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে সমবৃষ্টিপাত যুক্ত স্থানগুলিকে যুক্ত করা হয় , সেই রেখাটিকে সমবর্ষণ রেখা বলা হয় । ভূপৃষ্ঠে যেসব স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সমান , মানচিত্রে সেই স্থানগুলিকে যুক্ত করে এই সমবর্ষণ রেখা আঁকা হয় ।

তুষারপাত কাকে বলে

ঊর্ধ্বাকাশে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার সময় যদি বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের ( ০° সে ) নীচে নেমে যায় , তাহলে জলকণা সমূহ তুষারে পরিণত হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুষার নীচে পড়ার সময় উষ্ণ বায়ুর সংস্পর্শে আসে বলে গলে যায় এবং বৃষ্টি হিসাবেই মাটিতে পড়ে । তবে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা শীতপ্রধান অঞ্চলের বায়ু খুব শীতল বলে ওপরের তুষার পেঁজা তুলাের মতাে ঝিরঝির করে পড়ে । একে তুষারপাত বলা হয় । 

শিলা বৃষ্টি কাকে বলে

উর্ধ্বাকাশে প্রবল উর্ধ্বমুখী বায়ুর মাধ্যমে যখন মেঘ বা বৃষ্টির জলকণা সমূহ অনেক উঁচুতে খুব শীতল স্থানে উঠে যায় , প্রচণ্ড শৈত্যে ওই জলকণা সমূহ জমাট বেঁধে ছােটো ছোটা বরফে পরিণত হয় । বরফের আয়তন বেশ বড়াে হলে বা বায়ুর বেগ কমলে ওইসব বরফের টুকরােগুলি আরও জলকণা সংগ্রহ করে আয়তনে বেড়ে যায় এবং বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আয়তনের বরফের টুকরাে মাটিতে পড়ে । একেই বলে শিলা বৃষ্টি । 

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি কাকে বলে

অনেক সময় সমান আয়তনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ( ব্যাস ০.৫ মিলিমিটারেরও কম ) বিরামহীন ভাবে নিম্বাে-স্ট্রাটাস মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পড়ে । দেখলে যেন মনে হয় জলকণাগুলি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে । একেই বলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি । বর্ষাকালে মাঝে মাঝে এই ধরনের বৃষ্টি হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!