আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত
Contents
আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত

আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর । এটি ভূপৃষ্ঠের মােট ক্ষেত্রফলের প্রায় ১/৬ অংশ বা ১৬ শতাংশ স্থান জুড়ে অবস্থান করছে । এই মহাসাগর — প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় অর্ধেক । এর মােট ক্ষেত্রফল প্রায় ৮.২২ কোটি বর্গ কিমি । আটলান্টিক মহাসাগরে দুই ভিন্নধর্মী স্রোত প্রবাহিত হয়—
( ক ) উষ্ণ স্রোত এবং
( খ ) শীতল স্রোত ।
আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ স্রোত
আটলান্টিক মহাসাগরে অনেকগুলি উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় , যেমন— উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে দুটি উষ্ণ স্রোত সৃষ্টি হয়— ( ১ ) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং ( ২ ) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত । দুটি স্রোতই আয়ন বায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে যায় । এই দুটির মধ্যে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতটি উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে । আর দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতটি দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়ে ব্রাজিলের সেন্ট রক অন্তরীপে ধাক্কা খায় এবং দুটি শাখায় বিভক্ত হয় ।
( ৩ ) দক্ষিণের শাখাটি উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত নামে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
( ৪ ) উত্তরের শাখাটি ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং তারপর মিলিত শাখাটি পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে ।
( ৫ ) মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ওই মিলিত উষ্ণ স্রোতটির নাম হয় , উপসাগরীয় স্রোত ।
পৃথিবীর আবর্তন গতি ও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত উত্তর-পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় ।
( ৬ ) একেবারে উত্তরের শাখাটি ইরমিঙ্গার স্রোত নামে আইসল্যান্ডের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিমদিকে ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।
( ৭ ) দ্বিতীয় বা মাঝের শাখাটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে উত্তর-পূর্বদিকে বয়ে যায় ।
( ৮ ) তৃতীয় বা একেবারে দক্ষিণের শাখাটি শীতল হয়ে ক্যানারি স্রোত নামে পাের্তুগালের উপকূলে বাধা পেয়ে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর দক্ষিণে বয়ে যায় এবং শেষে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় । দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলের কাছে উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলনের ফলে প্রবল জলােচ্ছাস হয় ।
( ৯ ) এর ফলে ওই অঞ্চলে পশ্চিম থেকে পূর্বগামী উষ্ণ নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা বিপরীত স্রোত এবং
( ১০ ) গিনি বিপরীত স্রোতের সৃষ্টি হয় , যা পরে উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয় ।
আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল স্রোত
উত্তরের সুমেরু মহাসাগর থেকে এবং দক্ষিণের দক্ষিণ মহাসাগর থেকে কয়েকটি শীতল স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে । যেমন—
সুমেরু মহাসাগর থেকে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে আসা শীতল স্রোত :
( i ) সুমেরু মহাসাগর থেকে যে শীতল স্রোতটি গ্রীনল্যান্ডের পূর্ব উপকূল ধরে প্রবাহিত হয় , তার নাম পূর্ব গ্রীনল্যান্ড স্রোত ।
( ii ) সুমেরু মহাসাগর থেকে আর একটি শীতল স্রোত গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ধরে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত হয় , এর নাম ল্যাব্রাডর স্রোত ।
দক্ষিণ মহাসাগর থেকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে আসা শীতল স্রোত :
দক্ষিণ মহাসাগর থেকে আসা শীতল স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে ।
( iii ) ক্ষুদ্র শাখাটি ফকল্যান্ড স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল ধরে কিছুটা উত্তরে প্রবাহিত হয় । প্রধান শাখাটি প্রথমে ( iv ) কুমেরু স্রোত নামে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয় এবং তারপর ( v ) বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তরে বয়ে যায় , যা শেষে উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় , আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরাংশে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত , ক্যারিবিয়ান স্রোত , উপসাগরীয় স্রোত এবং ক্যানারি স্রোতের মাধ্যমে বিরাট এলাকা জুড়ে একটি জলাবর্ত বা ঘূর্ণস্রোতের সৃষ্টি হয় । এই জলাবর্তের মধ্যভাগ স্রোতহীন বলে ওই অংশে নানারকম আগাছা , শৈবাল জন্মায় । ওই অংশের নাম শৈবাল সাগর ।