ভূগোল

প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে

Contents

প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে

index 17
প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে

ঘূর্ণবাতের বিপরীত বৈশিষ্ট্য যুক্ত ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে । উচ্চচাপকে কেন্দ্র করে বহির্মুখী ও অধােমুখী ঘূর্ণিবায়ুকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত  বলা হয় । বায়ুর চাপ কেন্দ্রে সর্বাধিক হয় এবং তা বাইরের দিকে কমতে থাকে । কোরিওলিস বলের জন্য বায়ু উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে প্রবাহিত হয় ।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর উৎপত্তি ও গঠন

সাধারণভাবে নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের কোনাে স্থানে শৈত্য বৃদ্ধি পেলে সেখানে উচ্চ চাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় । এছাড়া শীতল বায়ুপুঞ্জের আগমনেও উচ্চ চাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হতে পারে । প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বায়ুর চাপ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় । বায়ুচাপের পার্থক্য থাকে প্রায় ১০ থেকে ২০ মিলিবার । ফলে , উচ্চ চাপ কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে চারপাশে বায়ুর চাপঢাল মৃদু হয় । ফলে , উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল ও ভারী বায়ু পাক খেতে খেতে নিম্ন চাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । এভাবে প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় । বায়ুর চাপীয় ঢাল কম হওয়ায় প্রতীপ ঘূর্ণবাত — ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অপেক্ষা দুর্বল হয় । এই ঘূর্ণবাতে সমপ্রেষ রেখাগুলি প্রায় উপবৃত্তাকার এবং সমপ্রেষ রেখাগুলির মধ্যে অন্তর্বর্তী দূরত্ব বেশি হয় । এর ব্যাস ৩০০০ কিমি পর্যন্ত হয় ।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর শ্রেণীবিভাগ

প্রতীপ ঘূর্ণবাতকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা —

শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত :

হিমমন্ডল ও শীতল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে বেশি শৈত্যের জন্য শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় । কানাডা ও সাইবেরিয়ার উত্তর অংশ এই ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিস্থল । এই ঘূর্ণবাতের বাতাস ঠাণ্ডা হয় । 

উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত :

উপক্ৰান্তীয় উচ্চ চাপ অঞ্চলে উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় । নিরক্ষীয় অঞ্চল এবং মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের উর্ধ্বগামী বায়ু উপক্ৰান্তীয় উচ্চ চাপ অঞ্চলে মিলিত হয় ও নিমজ্জিত হয় । এর ফলে , বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায় ও বাতাস উষ্ণ হয়ে এই প্রকার ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটায় । 

প্রতিবন্ধক প্রতীপ ঘূর্ণবাত :

ট্রপােস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে বায়ুর উর্ধ্বগামী প্রবাহ প্রতিহত হয়ে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা প্রতিবন্ধক প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটায় । এই ঘূর্ণবাত বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে ঘটে থাকে ।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য  

➡️ প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বাতাস অধােগামী হওয়ার জন্য ঘূর্ণবাত অপেক্ষা এটি খুবই সুস্থির ( stable ) । 

➡️ প্রতীপ ঘূর্ণবাতে প্রায়শই কোনাে সীমান্ত থাকায় এর নির্দিষ্ট কোনাে বায়ু স্থানান্তর রেখা ( Wind shift Line ) থাকে না । কিন্তু প্রতীপ ঘূর্ণবাত যত ভ্রমণ করতে থাকে ততই বায়ুর প্রবাহের দিক ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে । 

➡️ মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশে শীতকালে স্থির বায়ুপুঞ্জ থেকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় । 

➡️ প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ব্যাস কয়েকশাে কিমি থেকে কয়েক হাজার কিমি হয় । বৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার সমচাপ রেখা দ্বারা এই ঘূর্ণবাত খুব ধীর গতিতে নানা দিকে ভ্রমণ করতে পারে । 

➡️ বায়ুর নিমজ্জনের জন্য বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয় এবং ভূপৃষ্ঠের উত্তাপন থেকে তাপ প্রবাহ ( Heat waves ) শুরু হতে পারে । এইরূপ অবস্থায় উচ্চ তাপমাত্রা , হালকা বাতাস ও দূষণগ্রস্ত স্থির বাতাস স্বাস্থ্যের হানি ঘটায় । দৃশ্যমানতা ( Visibility ) ক্রমশ কমে আসে এবং বাতাসের কম আপেক্ষিক আর্দ্রতা অগ্নিঘটিত বিপদের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় ।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত অঞ্চলে শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে কেন

ভিনদেশী শীতল বায়ুপুঞ্জের আগমনে , নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে এবং অত্যধিক শৈত্যের জন্য হিমমণ্ডলে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় । অন্যদিকে নাতিশীতোষ্ণ ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের উর্ধ্বগামী শুষ্ক শীতল বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলে নিমজ্জনের ফলেও উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় । উচ্চ চাপ কেন্দ্র থেকে বাতাস পার্শ্ববর্তী নিম্ন চাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের জন্ম দেয় । চাপঢাল কম থাকায় বাতাস ধীরে প্রবাহিত হয় । এছাড়া বাতাসের নিমজ্জনের কারণে অ্যাডিয়াবেটিক প্রক্রিয়ায় নীচের বাতাস গরম হয়ে ওঠে , বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও তৎসঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পায় । এই অবস্থায় মেঘ সৃষ্টি এবং ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে না । আকাশ নির্মল থাকে । তাই , প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলে সুস্থির ও শান্ত অবস্থা বিরাজ করে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!