ইতিহাস

ভারতে ইংরেজ শক্তির সম্প্রসারণ প্রতিরোধে হায়দার আলীর ভূমিকা

Contents

ভারতে ইংরেজ শক্তির সম্প্রসারণ প্রতিরোধে হায়দার আলীর ভূমিকা

হায়দার আলী ছিলেন একজন সুদক্ষ বীর যােদ্ধা। সাধারণ এক অশ্বারােহী সৈনিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। প্রথমে মহীশূরের দুর্বল ওয়াদিয়ার নামের হিন্দু রাজবংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে এবং পরে মহীশূরের দেওয়ান খন্দেরাওকে অপসারণ করে হায়দার মহীশূরকে একটি পরাক্রান্ত রাজ্যে পরিণত করেন। ঐতিহাসিক নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিন‌্হার মতে — অন্য অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির মতাে হায়দারের শক্তি, উদ্যম ও প্রাপ্ত সুযােগসুবিধাই তার উত্থানকে সহজ করে দেয়।

download 3
হায়দার আলী

হায়দার-ইংরেজ সম্পর্ক

প্রথম দিকে হায়দার ব্রিটিশবিরােধী ছিলেন না, তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল মারাঠা ও নিজামের আক্রমণ প্রতিরােধ করে মহীশূরের অখণ্ডতা রক্ষা করা। কিন্তু কোম্পানির মাদ্রাজ কর্তৃপক্ষ হায়দার বিরােধী আর্কটের নবাব মহম্মদ আলির সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তুললে হায়দারের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের বদলে শত্রুতায় পরিণত হয়। নিজ সামরিক শক্তি ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতায় তিনি দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান।

ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

কখনও এককভাবে, কখনও মারাঠা ও নিজামের সঙ্গে মিলিতভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিজোট গঠন করে হায়দার দুটি যুদ্ধের অবতারণা করেন।

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ : 

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় হঠাৎ একদল অশ্বারােহী সৈন্য নিয়ে হায়দার দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি মাদ্রাজের উপকণ্ঠে হাজির হন। ভীত মাদ্রাজ কাউন্সিল হায়দারের সঙ্গে মাদ্রাজের সন্ধি ( ১৭৬৯ খ্রি . ) তে বাধ্য হয়। ভারত ইতিহাসে এটিই হল প্রথম সন্ধি , যা ইংরেজ নিজে উপযাজক হয়ে একটি ভারতীয় শক্তির সঙ্গে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল। সন্ধির শর্তানুযায়ী হায়দার ও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ উভয়েই একে অপরের বিজিত স্থান ও যুদ্ধবন্দি প্রত্যর্পণ করেন। এ ছাড়াও স্থির হয় হায়দার তৃতীয় কোনাে শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে তাকে ইংরেজরা রক্ষা করবে।

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ : 

পেশােয়া মাধব রাও মহীশূর আক্রমণ ( ১৭৭০ খ্রি . ) করলেও মাদ্রাজের সন্ধির শর্ত মেনে ইংরেজরা হায়দারকে সাহায্য করেনি। এর পাশাপাশি গুন্টুর সমস্যা সৃষ্টির জন্য হায়দার ইংরেজদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হন। এই অবস্থায় হায়দার বুঝতে পারেন ইংরেজরাই মহীশূরের প্রধান শত্রু। তাই ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ( ১৭৭৫ খ্রি . ) শুরু হলে সুযােগ বুঝে হায়দার ইংরেজ-বিরােধী মহীশূর-মারাঠা শক্তিজোট গড়ে তােলেন। পরে নিজামকেও ওই জোটে টেনে এনে তিনি ইংরেজ শক্তির উচ্ছেদে অগ্রসর হন। শুরু হয় দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ( ১৭৮০ খ্রি . )। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে হায়দার ব্রিটিশ শক্তিকে উচ্ছেদে অগ্রসর হন। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে হায়দার ব্রিটিশ শক্তিকে বিপর্যস্ত করে তােলেন। ঠিক এই সময় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হঠাৎ হায়দারের মৃত্যু হয়।

কৃতিত্ব

হায়দার আলী দেশবাসীকে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তিনি নিজেও অসামান্য দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে লড়াই করে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে ভারতমাতার বীর সন্তানরা সহজে পরাজয় স্বীকার করতে রাজি নয়। তারা নিজেদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করতে জানে। De laa Jour তাঁর  ‘ History of Haider Sha and Tipoo Sultan ’ – গ্রন্থে বলেছেন — হায়দার আলি খান নিঃসন্দেহে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব (‘ Haider Ali Khan was doubtlessly one of the greatest character Asia has produced ‘ )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!