সন্দীপ বিদ্রোহ
Contents
সন্দীপ বিদ্রোহ
বঙ্গোপসাগরের বুকে কয়েকটি ছােটোবড়াে দ্বীপের সমষ্টি নিয়ে সন্দীপ অঞ্চলটির অবস্থান ছিল । অনেকের মতে শস্যপ্রাচুর্যের জন্যই এই দ্বীপটির প্রথমে নাম ছিল স্বর্ণদ্বীপ , যা পরে সন্দীপ নাম ধারণ করেছে । কোম্পানির পােষ্য জমিদারগােষ্ঠী ও আহাদ্দার ( রাজস্ব সচিব ) গােকুল ঘােষালের শােষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্দীপবাসী যে বিদ্রোহ ঘােষণা করেছিল ( ১৭৬৯ খ্রি. ) তা সন্দীপ বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

সন্দীপ বিদ্রোহের কারণ
সন্দীপ বিদ্রোহের কারণগুলি ছিল 一
ব্রিটিশের কু-শাসন :
ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে সন্দীপ অঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছিল চাঁদ খাঁ ও তার দুজন আত্মীয় । বংশপরম্পরায় এরাই ব্রিটিশের কল্যাণে জমিদার হন । এদের মাধ্যমে ব্রিটিশ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের নামে যে অত্যাচার চালিয়েছিল , তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহ ঘােষণা করেছিল সন্দীপবাসীরা ।
গোকুল ঘোষালের অত্যাচার :
গােকুল ঘােষাল নামক এক লবণ ব্যবসায়ীকে কোম্পানি জমি জরিপের মাধ্যমে রাজস্বের হার নির্ধারণের কাজে সন্দীপে পাঠিয়েছিল । কিন্তু অর্থলােলুপ গােকুল ঘােষাল তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে বেনামে সন্দীপের আহাদ্দারি লাভ করেন । তিনি বিষ্ণুচরণ বসু নামক এক বিশ্বস্ত কর্মচারীর নামে রেজিস্ট্রি করে এক কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে আহাদ্দারির দায়িত্ব নেন । শুরু হয় সন্দীপ অঞ্চল জুড়ে গােকুল ঘােষালের লুণ্ঠন , যাতে অতিষ্ঠ হয়ে সন্দীপবাসী বিদ্রোহের রাস্তায় যায় ।
সন্দীপ বিদ্রোহের প্রকৃতি
প্রকৃতিগত দিক থেকে সন্দীপ বিদ্রোহ ছিল একটি কৃষক বিদ্রোহ । কেন না , সন্দীপের মুসলিম কৃষকরাই এই বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি ছিল । নােয়াখালি জেলার এই দ্বীপগুলির শতকরা ৮০ ভাগ বাসিন্দা ছিল মুসলিম । সন্দীপ অঞ্চলের অধিকাংশ লােকের জীবিকা ছিল কৃষি । এখানে পেশাগত দিক থেকে কর্মর্কার , সুত্রধর , ভুঁইমালি , বেহারা , কৈবর্ত , যােগী প্রভৃতি শ্রমজীবীদের বসবাস ছিল , এরাও এই বিদ্রোহে যােগ দিয়েছিল ।
সন্দীপ বিদ্রোহের সংঘর্ষ ও অবসান
গােকুল ঘােষালের প্ররােচনায় ব্রিটিশ গভর্নর সন্দীপ বিদ্রোহের নেতা আবু তােরাপকে দমন করার জন্য ক্যাপটেন নলিকিনকে পাঠান । এদিকে আবু তােরাপ তার জমিদারির অধীনস্থ কৃষক ও দাসদের নিয়ে বাঁধা দিতে গেলে নলিকিনের সঙ্গে আবু তােরাপের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে । সংঘর্ষে আবু তােরাপ পরাজিত ও নিহত হন । আবু তােরাপের মৃত্যুর পর কোম্পানি তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে গােকুল ঘােষাল তা বেনামে হস্তগত করেন । সন্দীপের কৃষকগণ পুনরায় ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গোকুল ঘােষালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে বিদ্রোহীদের দমন করেন , অবসান ঘটে সন্দীপ বিদ্রোহের ।
সন্দীপ বিদ্রোহের গুরুত্ব
কয়েকটি দ্বীপের দরিদ্র , অসহায় কৃষকশ্রেণি যেভাবে ব্রিটিশের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিল তাতে কৃষক বিদ্রোহই গৌরবান্বিত হয়েছিল । এই বিদ্রোহের সফলতা এখানেই যে বিদ্রোহীরা জমিদারি হারানাে পূর্বতন জমিদারদেরও পাশে পেয়েছিল ।