ইতিহাস

লখনৌ চুক্তি

Contents

লখনৌ চুক্তি

জাতীয় কংগ্রেসের লখনৌ অধিবেশন চলাকালীন চরমপন্থী নেতা তিলকের নেতৃত্বে কংগ্রেস ও মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগের মধ্যে এক চুক্তি হয় , যার নাম ‘ লখনৌ চুক্তি ‘। কংগ্রেসমুসলিম লিগের মধ্যেকার যাবতীয় মতাদর্শগত বিভেদকে দুরে সরিয়ে রেখে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ( ১৯১৬ খ্রি. ) । ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র  তাঁর ‘ Modern India ‘ গ্রন্থে লিখেছেন — হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের  ক্ষেত্রে লখনৌ চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপরূপে চিহ্নিত ( ‘ The Lucknow Pact marked an important step forward  in Hindu – Muslim unity ‘ ) ।

7758 Lucknow Pact
লক্ষ্ণৌ চুক্তি

লখনৌ চুক্তির পটভূমি

তিলক কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মিলনের উদ্যোগ নেন । অপরদিকে জিন্না তুরস্কের খলিফার বিরুদ্ধে ব্রিটিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আপসের প্রয়ােজন অনুভব করেন । ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ এক জোট হওয়ার উদ্যোগ নেয় । বেসান্তের উদ্যোগে দুটি দলই সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের  বিষয়ে পারস্পরিক সমঝােতার নীতি গ্রহণ করে ।

লখনৌ চুক্তির শর্তাবলি

লখনৌ চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল —

  1. কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ একসঙ্গে ব্রিটিশের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানাবে । 
  2. মুসলিম লিগ কংগ্রেসের স্বরাজের আদর্শ মেনে নেবে , অপরদিকে কংগ্রেসও মুসলিম লিগের আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি মেনে নেবে ।
  3. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের মােট সদস্যসংখ্যার  এক – তৃতীয়াংশ হবে মুসলিম সদস্য , যারা মুসলিমদের দ্বারাই নির্বাচিত হবেন ।

লখনৌ চুক্তির গুরত্ব

এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর লিগ ও কংগ্রেসের মিলিত প্রচেষ্টায় হিন্দু – মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ে । ধর্মীয় বিভেদ থাকা সত্ত্বেও দুই সম্প্রদায় যে জাতীয়  প্রয়ােজনে পুনরায় এক হতে পারে লখনৌ চুক্তি ছিল তার প্রমাণ ।

লখনৌ চুক্তির সমালোচনা

লখনৌ চুক্তি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালােচিত হয়েছে । সমালােচকদের মতে এই চুক্তির দ্বারা ধর্মকে রাজনীতির ক্ষেত্রে টেনে আনা হয়েছিল এবং তাতে ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু – মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বীজ রােপিত হয়েছিল ।

সাধারণ হিন্দু – মুসলিম স্বার্থরহিত : 

গান্ধিজির মতে লখনৌ চুক্তি ছিল শিক্ষিত ও ধনী হিন্দুদের সঙ্গে শিক্ষিত ও বিত্তবান মুসলিমদের মধ্যে একটি বােঝাপড়ামাত্র । এতে সাধারণ হিন্দু ও মুসলিমদের কোনাে স্বার্থ রক্ষিত ছিল না ।

আলাদা নির্বাচনাধিকার : 

এই চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস মুসলিম লিগের আলাদা নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রমাণ হয়ে যায় যে হিন্দু ও মুসলিম দুটি আলাদা জাতি ও তাদের স্বার্থও আলাদা ।

অদূরদর্শিতা : 

সাম্প্রদায়িক সূত্রকে মেনে নেওয়ায় এই চুক্তি ছিল অদূরদর্শিতার পরিচয় । তাই ড. বিপান চন্দ্র  তাঁর ‘ আধুনিক ভারত ’ গ্রন্থে বলেছেন — লখনৌ চুক্তি ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থানের রাস্তা  খুলে দেয় ( ‘ Lucknow pact – left the way open , to the future resurgence of Communalism in Indian politics ‘ ) ।

One thought on “লখনৌ চুক্তি

  • Babai maji

    Really very helpful note thank you sir

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!