লখনৌ চুক্তি
Contents
লখনৌ চুক্তি
জাতীয় কংগ্রেসের লখনৌ অধিবেশন চলাকালীন চরমপন্থী নেতা তিলকের নেতৃত্বে কংগ্রেস ও মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগের মধ্যে এক চুক্তি হয় , যার নাম ‘ লখনৌ চুক্তি ‘। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যেকার যাবতীয় মতাদর্শগত বিভেদকে দুরে সরিয়ে রেখে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ( ১৯১৬ খ্রি. ) । ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র তাঁর ‘ Modern India ‘ গ্রন্থে লিখেছেন — হিন্দু – মুসলিম ঐক্যের ক্ষেত্রে লখনৌ চুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপরূপে চিহ্নিত ( ‘ The Lucknow Pact marked an important step forward in Hindu – Muslim unity ‘ ) ।

লখনৌ চুক্তির পটভূমি
তিলক কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মিলনের উদ্যোগ নেন । অপরদিকে জিন্না তুরস্কের খলিফার বিরুদ্ধে ব্রিটিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আপসের প্রয়ােজন অনুভব করেন । ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ এক জোট হওয়ার উদ্যোগ নেয় । বেসান্তের উদ্যোগে দুটি দলই সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে পারস্পরিক সমঝােতার নীতি গ্রহণ করে ।
লখনৌ চুক্তির শর্তাবলি
লখনৌ চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল —
- কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ একসঙ্গে ব্রিটিশের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানাবে ।
- মুসলিম লিগ কংগ্রেসের স্বরাজের আদর্শ মেনে নেবে , অপরদিকে কংগ্রেসও মুসলিম লিগের আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি মেনে নেবে ।
- কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের মােট সদস্যসংখ্যার এক – তৃতীয়াংশ হবে মুসলিম সদস্য , যারা মুসলিমদের দ্বারাই নির্বাচিত হবেন ।
লখনৌ চুক্তির গুরত্ব
এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর লিগ ও কংগ্রেসের মিলিত প্রচেষ্টায় হিন্দু – মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ে । ধর্মীয় বিভেদ থাকা সত্ত্বেও দুই সম্প্রদায় যে জাতীয় প্রয়ােজনে পুনরায় এক হতে পারে লখনৌ চুক্তি ছিল তার প্রমাণ ।
লখনৌ চুক্তির সমালোচনা
লখনৌ চুক্তি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালােচিত হয়েছে । সমালােচকদের মতে এই চুক্তির দ্বারা ধর্মকে রাজনীতির ক্ষেত্রে টেনে আনা হয়েছিল এবং তাতে ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু – মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বীজ রােপিত হয়েছিল ।
সাধারণ হিন্দু – মুসলিম স্বার্থরহিত :
গান্ধিজির মতে লখনৌ চুক্তি ছিল শিক্ষিত ও ধনী হিন্দুদের সঙ্গে শিক্ষিত ও বিত্তবান মুসলিমদের মধ্যে একটি বােঝাপড়ামাত্র । এতে সাধারণ হিন্দু ও মুসলিমদের কোনাে স্বার্থ রক্ষিত ছিল না ।
আলাদা নির্বাচনাধিকার :
এই চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস মুসলিম লিগের আলাদা নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রমাণ হয়ে যায় যে হিন্দু ও মুসলিম দুটি আলাদা জাতি ও তাদের স্বার্থও আলাদা ।
অদূরদর্শিতা :
সাম্প্রদায়িক সূত্রকে মেনে নেওয়ায় এই চুক্তি ছিল অদূরদর্শিতার পরিচয় । তাই ড. বিপান চন্দ্র তাঁর ‘ আধুনিক ভারত ’ গ্রন্থে বলেছেন — লখনৌ চুক্তি ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থানের রাস্তা খুলে দেয় ( ‘ Lucknow pact – left the way open , to the future resurgence of Communalism in Indian politics ‘ ) ।
Really very helpful note thank you sir