মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্ব
Contents
মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল বা গুরুত্ব
ফলাফলের বিচারে মুন্ডা বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে সফল না হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না । বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে এই আন্দোলন ( ১৮৯৯ খ্রি. ২৪ ডিসেম্বর ) ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শেষ উল্লেখযােগ্য উপজাতি অভ্যুত্থান ।

প্রজাস্বত্ব আইন পাস
মুন্ডা বিদ্রোহের তীব্রতায় ব্রিটিশ বাধ্য হয় মুন্ডাদের অভাব – অভিযােগ শুনে সেগুলির সমাধান করতে এই লক্ষ্যে পাস হয় ছােটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন ( ১৯০৮ ) ( Chotonagpur Tenancy Act. 1908 ) ।
কুন্তকাঠি বা খুঁৎকাঠি প্রথার স্বীকৃতি
প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে প্রজাদের কুন্তকাঠি বা খুঁৎকাঠি প্রথা অর্থাৎ জমির যৌথ মালিকানা প্রথা স্বীকার করে নেওয়া হয় । এর পাশাপাশি মুন্ডাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা ও তাদেরকে বেগার খাটানাে নিষিদ্ধ হয় ।
বিরসা সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ
মুন্ডা বিদ্রোহ শেষপর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও বিরসা মুন্ডা তাঁর অনুরাগীদের যেভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তার ফলশ্রুতি হিসেবে বিদ্রোহের শেষে মুন্ডাদের মধ্যে ‘ বিরসা সম্প্রদায় ’ নামক এক উপজাতি শাখা আত্মপ্রকাশ করে । মুন্ডারা বিরসাকে ‘ বিরসা ভগবান ’ রূপে পুজো করা শুরু করে ।
তানা ভগৎ আন্দোলনের সূচনা
মুন্ডা বিদ্রোহের প্রভাবে ছােটোনাগপুরেও ওঁরাও সম্প্রদায়ের ভাঁইয়ারা জমির মালিকানা পাওয়ার লক্ষ্যে তানা ভগৎ আন্দোলন করেন । ওঁরাও উপজাতিগােষ্ঠী নিজেরাই যেহেতু জঙ্গল পরিষ্কার করে জমির রূপ দিয়েছে , তাই তারা ব্রিটিশকে কোনাে খাজনা দেবে না — এটাই ছিল এই আন্দোলনের মূল দাবি ।
জমি জরিপ ও তাদের অধিকার স্বীকার
সরকার বাধ্য হয়ে মুন্ডা এলাকার সব জমি জরিপ করার ব্যবস্থা করেন । এতদিন ধরে মুন্ডারা যে জমির ওপর নির্ভরশীল ছিল তাতে কার কতটুকু জমির সীমানা সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু নীতি ছিল না । কিন্তু এখন থেকে প্রতিটি মুন্ডা পরিবার তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায় ।
জমিদারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি
মুন্ডা বিদ্রোহের পর থেকে জমিদারদের সঙ্গে মুন্ডাদের সম্পর্কের যে অবনতি ঘটেছিল তার আর উন্নতি হয়নি ।
বেট বেগারির নিষিদ্ধকরণ
মুন্ডা বিদ্রোহের তীব্রতার জেরে ব্রিটিশ বাধ্য হয় আইন পাশ করিয়ে বেট বেগারি বা বেগার শ্রমদানের প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘােষণা করতে ।
উপসংহার
মুন্ডা বিদ্রোহের অন্যতম নেতা বিরসা এই বিদ্রোহের যে আদর্শ তুলে ধরেছিলেন , তাতে মুন্ডারা নিজেদের স্বার্থরক্ষায় সচেতন হয়ে ওঠে । এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিরুপে ব্রিটিশ ছােটোনাগপুর অঞ্চলের জন্য কিছু আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল । ঐতিহাসিক ড. সুমিত সরকারের মতে , সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনায় মুন্ডা বিদ্রোহ তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও পরাধীন ভারতে বিশেষত ছােটোনাগপুরে মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিরসার নেতৃত্বে মুন্ডারা সাম্রাজ্যবাদ বিরােধিতার নমুনা রেখেছে ।
Thanks