ইতিহাস

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষ সফল হওয়ার কারণ

Contents

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষ সফল হওয়ার কারণ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরােপ দুটি সমর শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায় । একদিকে ছিল অস্ট্রিয়া , জার্মানি , ইতালির ‘ ত্রিশক্তি চুক্তি ’ জোট অন্যদিকে ছিল ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , রাশিয়ার ‘ ত্রিশক্তি মৈত্রী বা আঁতাত ‘ । এই দুই পরস্পরবিরােধী শক্তিজোটের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তিবর্গ সফল হয়েছিল । যুদ্ধের মাঝপথে আমেরিকার যােগদান মিত্রপক্ষের সফলতা নিশ্চিত করেছিল । সৈন্যসংখ্যা , অস্ত্রশস্ত্র , সেনানায়ক ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই জার্মানি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কেন্দ্রীয় শক্তি অর্থাৎ অস্ট্রো – জার্মান পক্ষ শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সাফল্যের মূলে নানাবিধ কারণ কাজ করেছিল ।

2nd world war 1
বিশ্বযুদ্ধ

সামরিক শক্তি 

এককভাবে সামরিক ক্ষেত্রে জার্মানি শক্তিশালী হলেও জার্মান গােষ্ঠীর সম্মিলিত শক্তি কিন্তু মিত্রশক্তির সম্মিলিত শক্তির তুলনায় দুর্বলই ছিল ।

ঔপনিবেশিক ব্যাপ্তি 

মােট ৪ বছর ৩ মাস ১৩ দিন অর্থাৎ ১৫৬৫ দিনের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনারা প্রথম দিকে প্রায় সর্বত্র জয়লাভ করলেও ধৈর্য ও যুদ্ধোপকরণের অভাবে শেষপর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয় । অন্যদিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের সুবিশাল উপনিবেশের দৌলতে মিত্রশক্তির সম্মিলিত জনবল ও অর্থশক্তি জার্মানদের থেকে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ।

পর্যাপ্ত সেনা 

মিত্রশক্তি জার্মানদের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে একই সঙ্গে মােকাবিলা করতে বাধ্য করেছিল , যা কার্যত জার্মান কেন্দ্রীয় শক্তির পক্ষে অসম্ভব ছিল । এক্ষেত্রে মিত্রশক্তির পক্ষে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে কোনাে অসুবিধাই হয়নি ।

নৌশক্তি 

মিত্রশক্তির সম্মিলিত নৌবলের ( বিশেষ করে ইংল্যান্ডের নৌশক্তির ) মােকাবিলা করা জার্মান গােষ্ঠীর নৌশক্তির পক্ষে প্রায় অসম্ভবই ছিল । ইংল্যান্ড ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নৌশক্তিধর দেশ । তার মিত্র দেশগুলি ফ্রান্স ও রাশিয়াও নৌশক্তিতে এগিয়েছিল । কিন্তু জার্মানি ছাড়া অস্ট্রিয়া , ইতালির নৌবাহিনী ছিল যথেষ্ট দুর্বল ।

যুক্তরাষ্ট্রের যোগদান 

সৈন্য , অস্ত্র , অর্থ ইত্যাদি নিয়ে মিত্রশক্তির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যােগদান , কেন্দ্রীয় শক্তির কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় ।

কূটনৈতিক চাল 

যুদ্ধ চলাকালে কূটনীতির ক্ষেত্রেও জার্মান গােষ্ঠী মােটেই পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি । মিত্রশক্তি কূটনীতি দ্বারা ত্রিশক্তি চুক্তির অন্যতম সদস্য ইতালিকে নিজ পক্ষে টেনে আনতে সফল হলেও , জার্মানদের পক্ষে এরকম কিছু করে ওঠা সম্ভব হয়নি ।

যুদ্ধকৌশল 

সবশেষে বলা যায় , আক্রমণাত্মক যুদ্ধে জার্মানরা দক্ষ ছিল ঠিকই , কিন্তু আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের ( দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যা একান্ত প্রয়ােজন ) ক্ষেত্রে তাদের নানা অসুবিধা ছিল । বিশেষ করে , প্রয়ােজনে পিছিয়ে এসে নতুন করে আবার যুদ্ধ শুরু করার জন্য যে বিশাল ভূ – ভাগের প্রয়ােজন , জার্মানদের তার অভাব ছিল । এক্ষেত্রে রাশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূ – ভাগ মিত্রশক্তিকে দারুণ সাহায্য করেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!