মারাঠাশক্তির সংহতি রক্ষায় নানা ফড়নবিশের অবদান
Contents
মারাঠাশক্তির সংহতি রক্ষায় নানা ফড়নবিশের অবদান
তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধের ( ১৭৬১ খ্রি . ) আঘাত প্রশমিত হওয়ার আগেই ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে পেশােয়া মাধব রাও – এর অকালমৃত্যু মারাঠাশক্তির অপূরণীয় ক্ষতি করে । পেশােয়া পদ নিয়ে মারাঠা রাজনীতিতে তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয় । এই সময় মারাঠাশক্তির সংহতি বজায় রেখে জাতিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন নানা ফড়নবিশ নামক চিতপাবন বংশীয় এক প্রভাবশালী মারাঠা ব্রাহ্মণ ।

পেশােয়া পদ রক্ষার্থে
ধূর্ত ইংরেজরা মারাঠাদের পেশোয়া পদ নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বকে পশ্চিম ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের সুবর্ণ সুযােগ হিসেবে গ্রহণ করে । পেশােয়া পদে তখন দ্বিতীয় মাধব রাও । ইংরেজ সৈন্য মাধব রাওয়ের কাকা ক্ষমতাচ্যুত পেশােয়া রঘুনাথ রাও বা রাঘােবাকে সমর্থন করে পুনার দিকে অগ্রসর হয় । ফড়নবিশও তখন দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য রাজার সঙ্গে মিলিত হয়ে ইংরেজের মুখােমুখি হন ( ১৭৭৫ খ্রি . ) । শুরু হয় প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ । কিন্তু ফড়নবিশের কূটনীতির কাছে রাঘােবা ও ইংরেজের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যায় ।
সলবাই-এর সন্ধির মাধ্যমে
সলবাই -এর সন্ধি ( ১৭৮২ খ্রি . ) দ্বাড়া দ্বিতীয় মাধব রাওকে পেশোয়া বলে কোম্পানি স্বীকৃতি দেয় । এইভাবে ফড়নবিশের কুটনীতির ফলে ওয়ারেন হেস্টিংস মারাঠাশক্তিকে পুরােপুরি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন । মহারাষ্ট্রে আপাত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় । কিন্তু ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে নিঃসন্তান দ্বিতীয় মাধব রাও আত্মহত্যা করলে মারাঠাদের ঘরোয়া গোলমাল আবার প্রকট হয় । এবারও ফড়নবিশ তা সামাল দেন । রাঘোবার তরুণ পুত্র দ্বিতীয় বাজিরাও পেশােয়া হন ( ১৭৯৬ খ্রি . ) । সুযোগ বুঝে গভর্নর জেনারেল ওয়েলেসলি নতুন পেশােয়াকে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বললে অসাধারণ দৃঢ়তায় ফড়নবিশ তা প্রত্যাখ্যান করেন ।
মূল্যায়ন
‘ভারতের মেকিয়াভেলি’ উপাধিতে ভূষিত নানা ফড়নবিশ যেভাবে অন্তর্কলহে দীর্ণ মারাঠা সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষা করেছিলেন তাতে তাঁর অসামান্য দেশপ্রেমের পরিচয় মেলে । তাঁর মৃত্যুর পর মারাঠা নেতৃত্বে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা আর পূরণ হয়নি । গ্রান্ড ডাফের মতে — নানা ফড়নবিশই ছিলেন মহারাষ্ট্রের শেষ প্রতিভাবান নেতা ।