নীল বিদ্রোহে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভূমিকা
Contents
নীল বিদ্রোহে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ভূমিকা
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলচাষিদের নেতৃত্বে যে নীল বিদ্রোহ হয়েছিল তাতে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরােক্ষভাবে মধ্যবিত্তশ্রেণি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল । বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সম্পাদক , লেখক , আইনজীবীসহ বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীশ্রেণি এই বিদ্রোহে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিলেন ।

সংবাদপত্রের ভূমিকা
হরিশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ হিন্দু পেট্রিয়ট ‘ পত্রিকাতে নিয়মিতভাবে নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনি প্রকাশিত হত । ঈশ্বরগুপ্তের ‘ সংবাদ প্রভাকর ‘ , অক্ষয়কুমার দত্তের ‘ তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা ’ , সমাচার দর্পণ ‘ , ‘ সমাচার চন্দ্রিকা ‘ , সংবাদ – ভাস্কর ’ , ‘ সােমপ্রকাশ ’ প্রভৃতি পত্রিকাতে নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে অসংখ্য রচনা প্রকাশিত হয় । এ ছাড়া অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শিশিরকুমার ঘােষ তাঁর লেখনীতে নীল বিদ্রোহের কাহিনি তুলে ধরেন ।‘ সমাচার দর্পণে ’ লেখা হয় — “ যে চাষি নীলের দাদন নেয় তার মরণ পর্যন্ত খালাস নেই । ”
বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা
বিভিন্ন লেখক ও কবি নীল বিদ্রোহের ওপর গল্প , নাটক ও কবিতা লিখে নীলচাষিদের বিদ্রোহে উৎসাহ জোগান । নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনি নিয়ে রচনা করেন নীলদর্পণ নাটক ( ১৮৬০ খ্রি . ) । নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত , যা প্রকাশিত হয় ব্রিটিশ যাজক রেভারেন্ড জেমস্ লঙ – এর নামে । এই অপরাধে লঙকে ১ মাস কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় । এই জরিমানার টাকা দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ । ড. প্রমােদরঞ্জন সেনগুপ্ত ‘ নীল বিদ্রোহ ও বাঙালিসমাজ ’ গ্রন্থে লিখেছেন — “ নীল বিদ্রোহে নীলচাষিদের উৎসাহ দিয়েছিলেন স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । ”
আইনজীবীদের ভূমিকা
নীলকর সাহেবরা হাজার হাজার নীলচাষির নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করত । এইসব মােকদ্দমা পরিচালনা করার মতাে অর্থ ছিল না নীলচাষিদের । এই পরিস্থিতিতে শহুরে মধ্যবিত্তশ্রেণিভুক্ত উকিল ব্যারিস্টারদের একাংশ বিদ্রোহীদের পাশে এসে দাঁড়ান । প্রখ্যাত আইনজীবী শম্ভুনাথ পণ্ডিত ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান ।
বুদ্ধিজীবীদের সীমাবদ্ধতা
বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই চাননি যে নীল বিদ্রোহ সরকার বিরােধী আন্দোলনরূপে গড়ে উঠক । এঁরা আগাগােড়া ব্রিটিশ শাসনের প্রতি মােহাচ্ছন্ন এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রতি নির্ভরশীল ছিলেন । তাই দেখা যায় নীল বিদ্রোহ যখন চরমে পৌঁছেছে তখনও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিদ্রোহ থেকে সরে থেকেছেন । প্রসঙ্গত , রাজা রামমােহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুরও ইউরােপীয়দের নীলচাষে উৎসাহী ছিলেন এই ভেবে যে তাতে গ্রামীণ ভারতের সমৃদ্ধি ঘটবে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয়নি ।